সপ্তাহে সাত দিন থাকতে একমাত্র বৃহস্পতিবারেই মা লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য কী? পৌরাণিক কাহিনি ও সঠিক পূজার নিয়ম জানুন এই ব্লগে।

{tocify} $titel={Table of Contents}
মা লক্ষ্মী সনাতন হিন্দু ধর্মের অন্যতম পুজনীয়া দেবী।দেবী লক্ষ্মীর কৃপা ছাড়া জীবনে উন্নতি সম্ভব না।আমরা সনাতনীরা প্রত্যেকেই কিন্তু, বৃহস্পতিবার করে দেবী লক্ষ্মীর পুজা আরাধনা করে থাকি।কিন্তু, প্রশ্ন,কেন এই বৃহস্পতিবার। সপ্তাহে সাতদিন থাকতে বৃহস্পতিবারকেই কেন বাছা হল, দেবী লক্ষ্মীর পুজা করবার জন্য?
তাই,আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো কেন মা লক্ষ্মী বৃহস্পতিবার পূজিতা হন ও তার পিছনের কাহিনি এবং সর্বোপরি জানব, লক্ষ্মী পূজার সঠিক নিয়ম। চলুন শুরু করি!
$ads={1}কেন বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মী পূজিত হন?
বৃহস্পতির বিশেষ প্রভাব
সপ্তাহের প্রতিটি বারেরই কোনও না কোনও অধিপতি দেবতা আছেন,যেমন রবিবারের ক্ষেত্রে সুর্যনারায়ণ,সোমবারের ক্ষেত্রে চন্দ্রদেব। তেমনি বৃহস্পতিবারের অধিপতি হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি। যিনি দেবকুলের গুরু বলে পরিচিত৷
এই দেবগুরু বৃহস্পতি হলেন জ্ঞান,ধর্ম,প্রজ্ঞা,উন্নতি,ধী ও সমৃদ্ধির প্রকাশ। অন্যদিকে দেবী লক্ষ্মীর পুজার ক্ষেত্রেও আমাদের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্য থাকে উন্নতি,সমৃদ্ধি ও ধনধান্য লাভ। তাই মনে করা হয়,বৃহস্পতিবারে দেবী লক্ষ্মীর বিশেষভাবে আরাধনা করলে অবশ্যই ধনধান্যাদির সমূহ বৃদ্ধিলাভ হয়।দেবীর বিশেষ কৃপালাভ হয়।
বৃহস্পতি বার লক্ষ্মী পূজা:পৌরাণিক কাহিনী
বিভিন্ন পুরাণে আমরা বিভিন্নভাবে দেবীলক্ষ্মী ও বৃহস্পতি ভগবানের উল্লেখ পাই। পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনী থেকে জানা যায়,একদা দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে স্বয়ং দেবগুরু বৃহস্পতি, দেবীর কঠোর তপস্যা করেন।
দেবগুরু বৃহস্পতির সাধনায় তুষ্ট হয়ে দেবী লক্ষ্মী, তাকে আশীর্বাদ দেন এই বলে,যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবারে আমার পূজা করবে, তার ঘরে কখনও ধন-সম্পদের অভাব হবে না। মনে করা হয়,সেই দিন থেকেই আমরা সনাতনী হিন্দুরা বিশেষত বৃহস্পতিবারে অবশ্যই দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে থাকি,ও বৃহস্পতিবারকে লক্ষ্মী বার বলেও জেনে থাকি।
ধন লাভ ও সৌভাগ্যের দিন
শাস্ত্রে বৃহস্পতিবারকে সৌভাগ্যের প্রতীক রূপে বলা হয়েছে৷ এই বারে করা প্রতিটি কর্মই স্বয়ং দেবগুরু বৃহস্পতির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়৷ এই দিনে কুকর্ম করলেও যেমন সেটা কর্মকর্তার জীবনে অধিক প্রভাব ফেলে,তেমনই সুকর্মও কর্তার জীবনে বয়ে আনে সুখের ফসল।
$ads={2}
কীভাবে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজা করবেন?
উপবাস ও পবিত্রতা
- যদিও বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের অনেকের পক্ষেই উপবাস করে পুজো করাটা দুঃসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। তথাপি,ভক্তগণের পক্ষে সম্ভব হলে অবশ্যই, উপবাস করেই দেবীর আরাধনা করা উচিত৷
- উষাকালে নিদ্রাত্যাগ করেই স্নানাদি নিত্যক্রিয়া সম্পন্ন করে ভক্তিপূর্ণ চিত্তে লক্ষ্মীদেবীর পুজা করবেন।
পুজার সামগ্রী
ভক্তগণ,যথাসাধ্য উপকরণাদি দিয়েই দেবীর আরাধনা করবেন,তথাপি বিশেষ কিছু উপকরণ উল্লেখ করা হল,যা প্রতি বৃহস্পতিবার দেবী লক্ষ্মীর পুজায় একান্তভাবেই প্রয়োজন।
এছাড়াও ভক্তগণ,তাদের মনের ইচ্ছা ও সাধ্য অনুসারে যথাযথ উপচারে মায়ের পুজায় ব্রতী হবেন।
মন্ত্র ও স্তোত্র পাঠ
দেবীর পুজায় যেকোনও ধরণের লক্ষ্মী দেবীর স্তোত্রমূলক মন্ত্রপাঠ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এই ওয়েবসাইটের স্তোত্র ও মন্ত্র নামের সেকশানটি ফলো করতে পারেন।
এছাড়া যদি কোনও মন্ত্র নাও জানা থাকে,সেক্ষেত্রে সর্বনীন্ম "লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ" এই মাত্র পাঠ করলেও চলবে।
এছাড়া যদি বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও সংস্কৃত শিক্ষালাভ হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে শ্রীসুক্ত,মেধাসুক্তের মত গুরুত্বপূর্ণ দেবীসুক্ত পাঠের ফল অপরিসীম।
দান ও সেবা
পুর্বেই বলা হয়েছে এই বৃহস্পতিবারে করা প্রতিটি কিকর্ম বা সুকর্ম মানুষের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই অতি অবশ্যই এই শুভ দিনে আমাদের সুকর্মের দিকেই নজর দেওয়া উচিত৷
এই বৃহস্পতিবারে গরিবদের দান করলে এবং গরু, ব্রাহ্মণ ও গুরুজনের সেবা করলে এই সুকর্মের ফসল আমাদের জীবনকে অনেক বেশী প্রভাবিত করে।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার নিয়মাবলী
- সকালে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্রে পুজা করবেন।
- পুজার বাসনপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
- লক্ষ্মী দেবীর ছবি বা মূর্তির সামনে ঘৃত প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজা শুরু করুন।
- কুমকুম, চন্দন, ফুল ও বেলপাতা নিবেদন করা উচিত।
- দেবীকে ভোগ নিবেদন করে আরতি করুন।
- যথাশক্তি মন্ত্রপাঠ ও জপ করুন।
- লক্ষ্মী স্তোত্র বা শ্রীসূক্ত পাঠ করা শুভ।
- বৃহস্পতিব্রত রাখলে পুজারফল দ্রুত লাভ হয়।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার উপকারিতা
- গৃহে ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায়।
- দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ হয়।
- পারিবারিক শান্তি ও বজায় থাকে।
- বৃহস্পতিগ্রহের সাথে সাথে নবগ্রহ প্রসন্ন হয়।
- ব্যবসা ও কর্ম জীবনে উন্নতি ঘটে।
- মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
- জীবনে সুখ বজায় থাকে।
সারকথা
দেবী লক্ষ্মীর পুজা শুধুমাত্র ধনসম্পদ লাভের জন্য করা উচিত নয়। দেবী আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতিবাচকভাব বয়ে আনে৷ তাই দেবীর কাছে বিদ্যা,বুদ্ধি,জ্ঞান ও শক্তির প্রার্থনাই জানানো উচিত।
কারণ,এই চারটি সম্পদ যার কাছে থাকে,ধনসম্পদ তার জীবনে এমনিই চলে আসে৷
যদ্যপি প্রতিটি দিন বা মুহুর্তই দেবীকে স্মরণ ও মনন করা উচিত, তথাপি,বৃহস্পতিবার বিশেষভাবে দেবীর আরাধনা প্রতিটি সনাতনী হিন্দুর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।
তাই এই বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীপুজা অবশ্যই করুন ও লাভ করুন দেবী লক্ষ্মী ও দেবগুরু বৃহস্পতির অশেষ কৃপা৷